জাতিসংঘ গঠনের পটভূমি
আমরা জানি বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে মাত্র ২৫ বছরের ব্যবধানে পৃথিবীতে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রথমটি হয় ১৯১৪ সালে এবং দ্বিতীয়টি শুরু হয় ১৯৩৯ সালে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এসব যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। এ যুদ্ধ ছিল মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রায় বিরাট বাধা। সেজন্য যুদ্ধের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী চলেছে শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টা। তাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯২০ সালে গঠিত হয়েছিল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বা লীগ অব নেশনস। কিন্তু বিভিন্ন দেশের স্বার্থপরতার কারণে এ সংস্থাটি স্থায়িত্ব লাভকরেনি। ফলে ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীকে গ্রাস করে। এ যুদ্ধে বিভিন্ন দেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। জাপান আণবিক বোমার আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়। মারা যায় লাখ লাখ মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা দেখে বিশ্ববাসী শংকিত ও হতবাক হয়ে যায়। তাদের মনে দানা বাঁধে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। এছাড়া তারা অনুভব করে মানব কল্যাণের জন্য যুদ্ধকে পরিহার করতে হবে।
দেশগুলোকে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসতে হবে। ফলে ১৯৪১ সাল থেকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হাতে নেয়। তৎকালীন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট-এর উদ্যোগে এবং বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সাথে দীর্ঘদিন আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ১৯৪৫ সালের ২৪-এ অক্টোবর তারিখে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ন্যায় অন্য কোনো যুদ্ধের ধ্বংসলীলা থেকে মুক্তির জন্য জাতিসংঘের জন্ম হয়।
জাতিসংঘ গঠন
জাতিসংঘ মোট ছয়টি সংস্থা বা শাখা নিয়ে গঠিত।
শাখাগুলো নিম্নরূপ:
ক) সাধারণ পরিষদ
খ) সচিবালয়
গ) অছি পরিষদ
ঘ) আন্তর্জাতিক আদালত
ঙ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ
চ) নিরাপত্তা পরিষদ
শুরুতে জাতিসংঘের সদস্য সংখ্যা ছিল ৫১। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৯৩। জাতিসংঘের মহাসচিব হচ্ছে এর প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা। নরওয়ের অধিবাসী ট্রিগভেলি ছিলেন জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব। বর্তমান (জানু-২০১৭ হতে) মহাসচিবের নাম অ্যান্টনিও গুতেরেস (Antonio Guterres)। তিনি পর্তুগালের অধিবাসী। জাতিসংঘের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে অবস্থিত। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে।
জাতিসংঘের নিজস্ব পতাকা আছে। পতাকাটি হালকা নীল রঙের। মাঝখানে সাদার ভিতরে বিশ্বের বৃত্তাকার মানচিত্র রয়েছে। এর দুইপাশ দুটি জলপাই পাতার ঝাড় দিয়ে বেষ্টিত।
জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা ছয়টি। এগুলো হলো: আরবি, চাইনিজ, ইংরেজি, ফরাসি, রাশিয়ান ও স্পেনিশ। জাতিসংঘের যেকোনো সভায় এই ছয়টি ভাষার যেকোনো একটি ব্যবহার করা হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাকি ভাষাগুলোতে অনুবাদ হয়ে যায়। তবে ইংরেজি ভাষার উপর বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়ে থাকে।
কাজ: জাতিসংঘের গঠন সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত রচনা তৈরি কর। |
common.read_more